বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে গ্রামীণ হাট-বাজার। তৎকালীন গ্রামবাংলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব ছিল হাট-বাজারের নাম। তেমনই টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা নামকরণেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ঐতিহ্যকে। প্রাচীনকাল থেকে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বহন করে আসছে হাট-বাজার।
তবে কালের বিবর্তনে বিলীন হচ্ছে গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য। ফলে প্রভাব পড়েছে কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণে। এখন আর কৃষিপণ্য বাজারে দামাদামি করে ক্রয় বিক্রয়ের দৃশ্য চোখে পরে না।
বুধবার (২৪ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার মোট ১৯টি হাটের মধ্যে নাগরপুর সদর (বাবনা পাড়া) হাট ঐতিহ্যবাহী হলেও বর্তমানে এ হাটে পুরোনো জৌলুস আর নেই। কারণ হিসেবে যত্রতত্র দোকান নির্মান অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল অতিরিক্ত খাজনা আদায়সহ বিভিন্ন অ-ব্যবস্থাপনাকেই দায় করছে স্থানীয়রা।
প্রতি বুধবার সাপ্তাহিক অনুষ্ঠিত এই হাট প্রসঙ্গে স্থানীয় পুরাতন ব্যবসায়িদের তথ্যমতে,একটি পরিবারের পুরো সপ্তাহের বাজার সম্পূর্ণ হতো এই হাটের দিনে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীদের পদচারণায় মুখোরিত থাকতো হাটের পরিবেশ। তবে কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকান পাট খোলা থাকায় কমেছে হাটের কদর।
পূর্বের হাটের-ইতিহাস থেকে জানা যায়, পুরাতন এই জম-জমাট হাটে পণ্য বেচাকেনা করতে ইজারাদারকে নামমাত্র কর দেয়া হলেও বর্তমানে ইজারা বেড়েছে কয়েকগুণ। মালি থেকে শুরু করে ঝাড়ুদার পর্যন্ত হাট রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মিত ইজারা তোলা হলেও বর্তমানে অ-ব্যবস্থাপনা বিদ্যমান। ফলে নিয়মিত হাটে আসা ব্যাপারীরা আগ্রহ হারাচ্ছে।
নাগরপুরের স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, নাগরপুর অঞ্চলে অন্যতম জনপ্রিয় এ হাটে একসময়ে নৌপথে বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য আসতো এবং ব্যাপক সমাগম হতো জনসাধারণের।
নাগরপুর কাঁচাবাজারের পুরাতন ব্যবসায়ী মো. জহির উদ্দিন মিয়া বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে শাক-সবজি, ধানসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে নাগরপুর হাটে যেতাম। মাথায় করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম সেই সময়ে সীমিত গাড়ি চলাচল করতো। বিক্রিত পণ্যের টাকা দিয়ে আবার টুকরি করে পুরো এক সপ্তাহের বাজার নিয়ে আসতাম। তখন আলাদা আনন্দ ছিল। এখন এগুলো শুধুই স্মৃতি।
টিএইচ